ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

ভূমিকা: (Introduction) ব্যবসা শুরুর প্রথমেই একটি প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে। সঠিক প্রকল্প নির্বাচনের পর ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশ কিছু করণীয় কাজ রয়েছে। এ সকল করণীয় কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একটি সঠিক প্রকল্প হিসেবে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরকে নির্বাচন করা হলো। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটি ব্যবসা হিসেবে চালু করার আগে যেমন কোনো স্থানে স্টোরটি স্থাপন করা হবে, তার ব্যবস্থাপনার ধরন কেমন হবে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা কত হবে, তাদের যোগ্যতা কেমন হবে, আইনগতভাবে তার অবস্থান কেমন হবে, সে সম্পর্কে আগেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠন করতে হবে। ব্যবসা শুরুর আগেই ব্যবসা সম্পর্কে একটি সুগঠিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে । অর্থাৎ ব্যবসায়ের প্রকৃতি, কতটুকু পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হবে, কীভাবে বাজারজাত করা হবে, ব্যবস্থাপনার ধরণ কেমন হবে, প্রাথমিক অর্থসংস্থান কীভাবে হবে এবং লাভ-ক্ষতি কেমন হবে ইত্যাদি সবকিছু ব্যবসা শুরুর পূর্বে নির্ধারণ করে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যত সুন্দর ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা যাবে ব্যবসায় তত বেশি সাফল্য লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে ।

Content added By

ব্যবসার ধরণসমূহ (Types of Business )

জীবিকা অর্জনের জন্য যারা ব্যবসা করে তাদের কার্যাবলি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, সবাই একই ধরণের ব্যবসায়ে নিয়োজিত নয়। তাদের কেউ শুধু পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে, কেউ পণ্যদ্রব্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে, আবার কেউ গ্রাহকের কোনো জিনিস মেরামত করে জীবিকা নির্বাহ করে ।

ধরণ অনুযায়ী ব্যবসাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় : যথা : 

১. ক্রয়-বিক্রয় জাতীয় ব্যবসা 

২. সেবামূলক ব্যবসা 

৩. উৎপাদনমূলক ব্যবসা

নিম্নে ব্যবসার ধরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. ক্রয়-বিক্রয় জাতীয় ব্যবসা: তৈরি পণ্য উৎপাদক, পাইকার বা অন্য কোনো মধ্যস্থ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পণ্য কিনে এনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করার মধ্যে সীমিত ব্যবসাকে ক্রয়-বিক্রয় জাতীয় ব্যবসা বলে। এক্ষেত্রে পণ্যের গুণ বা আকৃতিগত কোনো পরিবর্তন করা হয় না। এ জাতীয় ব্যবসায়ের উদাহরণ মুদি দোকান, ওষুধের দোকান, কাপড়ের দোকান, মনিহারি দোকান ইত্যাদি। এ জাতীয় ব্যবসা খুচরা বা পাইকারি উভয় ভিত্তিতে পরিচালিত হয় ।

২. সেবামূলক ব্যবসা: পণ্য বা দ্রব্যের গুণ পরিবর্তন করে কিংবা অন্য কোনো ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে আয় উপার্জনে নিয়োজিত ব্যবসাকে সেবামূলক ব্যবসা বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ একজন টেলিভিশন বা রেডিও মেকানিক একটি নষ্ট হয়ে যাওয়া টেলিভিশন বা রেডিওকে তার কারিগরি জ্ঞান ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে সারিয়ে তুলে । এজন্য অনেক সময় তার টুলস এবং যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয় যা সে নিজেই সরবরাহ করে । এ কাজের বিনিময়ে সে পারিশ্রমিক পায়। এক্ষেত্রে তার কাজটি সেবামূলক ব্যবসায়ের অন্তর্গত। এছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, ট্রাভেল এজেন্সি, ফটোকপিয়ার ইত্যাদি সেবামূলক ব্যবসায়ের অন্তর্গত ।

৩. উৎপাদনমূলক ব্যবসা: যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সাহায্যে কাঁচামালের আকৃতি ও প্রকৃতিগত পরিবর্তন সাধন করে নতুন পণ্য তৈরি করার কাজে নিয়োজিত ব্যবসাকে উৎপাদনমূলক ব্যবসা বলে। এ ধরনের ব্যবসায়ে কাঁচামালকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রূপ পরিবর্তন করে উৎপাদিত পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রয় করা হয় । যেমন- কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি, গম থেকে আটা, এমএস শিট থেকে আলমারি তৈরি, প্লাস্টিক দানা থেকে বলপেন তৈরি ইত্যাদি । উৎপাদনমূলক ব্যবসাকে শিল্প নামে আখ্যায়িত করা হয় । পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসার ধরন মূলত বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কার্যাবলির উপরই নির্ভরশীল।

ব্যবসায় সাংগঠনিক কাঠামো: 

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছোট বা বড় আকারের হতে পারে। ব্যবসার জন্য যেসব আইনানুগ সাংগঠনিক কাঠামো সুবিধাজনক বলে বিবেচিত হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো : 

১. একমালিকানা ব্যবসা 

২. অংশীদারি ব্যবসা 

৩ । যৌথ মূলধনি ব্যবসা 

৪. সমবায় সমিতি 

৫. রাষ্ট্রীয় ব্যবসা

১. একমালিকানা ব্যবসা 

একজন মাত্র ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসা বলে ।

ব্যাপক অর্থে একমালিকানা ব্যবসা হলো এমন এক ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যার মালিক, পরিচালক, সংগঠক ও পুঁজি সরবরাহকারী একজন মাত্র ব্যক্তি, যিনি এককভাবে সকল ঝুঁকি বহন করেন এবং সমুদয় মুনাফা ভোগ করেন । গ্লেস ও বেকার-এর মতে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত একক ব্যক্তির মালিকানাধীন ব্যবসায়ই হলো একমালিকানা ব্যবসা। ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায়ই সবচেয়ে জনপ্রিয়। আমাদের দেশে মুদি দোকান, কনফেকশনারি, রেস্তোরা এবং যাবতীয় খুচরা দোকান একমালিকানার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় ।

২. অংশীদারি ব্যবসা (Partnership Business )

সাধারণ অর্থে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে কারবার গঠন ও পরিচালনা করে মুনাফা অর্জন করলে তাকে অংশীদারি ব্যবসা বলে ।

ব্যাপক অর্থে: কমপক্ষে দুজন এবং সর্বোচ্চ বিশজন (ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন) ব্যক্তি মুনাফা অর্জন ও তা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে তাকে অংশীদারি ব্যবসা বলে ।

বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪ ধারায় অংশীদারি ব্যবসার নিম্নরূপ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজন দ্বারা পরিচালিত ব্যবসার মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তাকে অংশীদারি, যারা এরূপ সম্পর্ক সৃষ্টি করে তাদের প্রত্যেককে অংশীদার এবং সম্মিলিতভাবে তাদের ব্যবসাকে অংশীদারি ব্যবসা বলে ।

৩। যৌথ মূলধনি ব্যবসা ( Joint Stock Business ) 

সাধারণ অর্থে কোম্পানি আইন অনুযায়ী যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে যে ব্যবসা গঠিত ও পরিচালিত হয় তাকে যৌথ মূলধনি ব্যবসা বলে ।

ব্যাপক অর্থে কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যৌথভাবে মূলধন সরবরাহ করে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট আইনের আওতায় কোনো ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করলে তাকে যৌথ মূলধনি ব্যবসায় বলে ।

১. ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২(১ ঘ) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোম্পানি বলতে কোম্পানি আইনের অধীনে গঠিত ও নিবন্ধিত অথবা কোনো বিদ্যমান কোম্পানিকে বোঝায় ।

কোম্পানির মোট মূলধনকে কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা হয় । এক একটি অংশকে শেয়ার বলে । শেয়ার ক্রেতারাই কোম্পানির মালিক । যৌথ মূলধনি কোম্পানি দুই প্রকারের । যথা- 

i. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি 

ii. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি

৪. সমবায় সমিতি (Co-operative Society) 

সাধারণ অর্থে নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জনের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে সমবায় সমিতি বলে ।

ব্যাপক অর্থে সমাজের স্বল্প আয়ের লোকেরা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে সংগঠন গড়ে তুলে তাকে সমবায় সমিতি বলে ।

মি. হেনরি কালভার্ট-এর মতে, 'সমবায় হলো এমন একটি সংগঠন যাতে সমতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে একত্রিত হয় ।

সমাজের বিত্তহীন বা একই পেশাভুক্ত ব্যক্তিরা পারস্পরিক সমঝোতা, সহযোগিতা ও সম-অধিকারের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে। সমবায় সমিতিতে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য থাকে । একজন সদস্য একাধিক শেয়ার ক্রয় করতে পারে কিন্তু একটি বেশি ভোট দিতে পারে না। বাংলাদেশে বর্তমান ২০০১ সালের সমবায় আইন ও ২০০৪ সালের সমবায় সমিতি বিধিমালার আওতায় এরূপ সমিতি গঠন ও পরিচালনা করতে হয় ।

৫. রাষ্ট্রীয় ব্যবসা (State business ) 

রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র কর্তৃক স্থাপিত বা পরবর্তী সময়ে জাতীয়করণকৃত কোনো ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব ও মালিকানা সরকারের অধীনে থাকলে তাকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসা বলে। এ ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ করা, স্বয়ং রাষ্ট্রই এ ব্যবসার মালিক । সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক এ ধরনের ব্যবসা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। জাতীয় সংসদে বিল পাসের মাধ্যমে এরূপ ব্যবসার সৃষ্টি হয়। মোট কথা, জনসাধারণের কল্যাণ ও স্বার্থের প্রতি খেয়াল রেখে রাষ্ট্রীয় ব্যবসা গড়ে ওঠে। যেমন- ডেসকো, ওয়াপদা, বিটিসিএল, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, সার কারখানা ইত্যাদি ।

Content added By

ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক বিচার্য বিষয়সমূহ

ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক বিচার্য বিষয় বলতে এরূপ বিষয়কে বোঝানো হয় যার আলোকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গোড়া পত্তন করা হয় । অর্থাৎ যে বিশেষ বিচার্য বিষয়সমূহ ব্যবসা পরিচালনা করার প্রাথমিক স্তরেই বিবেচনা করতে হয় তাকে ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক বিচার্য বিষয় বলে ।

১। ব্যবসায় পরিকল্পনা (Business Plan) 

একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনার জন্য একজন উদ্যোক্তার প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। অনেকেই ব্যবসা পরিকল্পনাকে ব্যবসার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ভিত্তি বা আয়না বলে থাকেন। সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট ব্যবসায় প্রণয়ন ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব নয়। ব্যবসা পরিকল্পনা হলো ব্যবসা পরিচালনার পথচিত্র, যা অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করলে ব্যবসার উন্নতি ও অবনতি পরিমাপ করা হয়। মোট কথা, ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তা হিসেবে তুমি কী করতে চাও এবং তোমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কীভাবে তুমি তোমার সম্পদ কাজে লাগাবে তার লিখিত বিবরণী বিশেষ । 

২। ব্যবসার ধরন ও পরিধি 

৩। প্রয়োজনীয় সংগঠন 

৪। স্থান

Content added || updated By

ব্যবসা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে যে সকল বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. পরিবহন ও যাতায়াতের সুবিধা (Transport and Traffic Facility): ব্যবসার সফলতা উন্নত পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। এজন্য এর অবস্থান নির্বাচনে পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ব্যবসার অবস্থান কেন্দ্রের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে একদিকে ক্রেতারা সহজেই ঐ স্থানে আগমন করতে পারে অপরদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে অতি সহজে সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য পরিবহন ও যাতায়াত সুবিধার কেন্দ্রস্থলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। 

২. ব্যবসার প্রকৃতি (Nature of Business): ব্যবসার অবস্থান নিরূপণের জন্য এর প্রকৃতি বিবেচনা করা হয় । এজন্য দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা সংগঠন ভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে । যেমন বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো শহরের কেন্দ্রস্থলে গড়ে উঠলেও ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামের যে কোনো সুবিধামতো স্থানে গড়ে ওঠে। 

৩. গুদামজাতকরণ সুবিধা (Ware Housing Facility): ব্যবসায়ী ক্রেতা বা ভোক্তাদের উদ্দেশে উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর কাছ থেকে একসাথে ব্যাপক পরিমাণ পণ্য ক্রয় করে আনে। এজন্য তাকে গুদামজাত করে রাখতে হয় । তাই দেখা যায় বিভিন্ন শহর, বন্দর ও বাজার এলাকার আশপাশে প্রচুর গুদাম ঘর প্রতিষ্ঠা করা হয় । ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্য সংরক্ষণের সুবিধার জন্য এ সকল স্থানকে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনকে বিবেচনায় আনে । 

৪. কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা (Availability of Raw Materials): পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের উদ্দেশে ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবস্থান নির্বাচনের জন্য কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনা হয় । কারণ কাঁচামাল উৎপাদন এলাকায় গড়ে উঠলে উৎপাদন ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পায় । উদাহরণস্বরূপ চা উৎপাদন অঞ্চলে চা শিল্প, ইক্ষু উৎপাদন অঞ্চলের আশপাশে চিনিশিল্প প্রভৃতি ব্যবসা গড়ে ওঠে। 

৫. শ্রমশক্তির সহজপ্রাপ্যতা (Availability of Manpower): যে সমস্ত ব্যবসায় প্রচুর শ্রমশক্তি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর অবস্থান নির্বাচনে শ্রমিক কর্মীর সহজপ্রাপ্যতাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। কারণ শ্রমশক্তির সহজপ্রাপ্যতার কারণে আমাদের দেশে বহু বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেমন- বাটা কোম্পানি । তাছাড়া আমাদের দেশে সস্তায় এবং সহজে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায় বিধায় এখানে অনেক গার্মেন্টস শিল্প গড়ে উঠেছে। 

৬. জ্বালানিশক্তির সহজপ্রাপ্যতা (Availability of Fuel): ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে জ্বালানিশক্তির সহজপ্রাপ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে সহজে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা প্রভৃতি সহজে পাওয়া যায় সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

৭. ক্রেতাদের অবস্থান (Standard of Customer): ক্রেতাদের মান, রুচি ও চাহিদা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূর্বক ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ব্যবসার অবস্থানগত ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ।

৮. জমির মূল্য (Value of Land) : বর্তমানে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে প্রস্তাবিত ব্যবসার প্রয়োজনীয় জমির মূল্যকে বিবেচনায় আনা হয় । যেখানে উঁচু জমি বন্যামুক্ত সস্তায় পাওয়া যায় সেখানে ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে ।

৯. বাজারের সান্নিধ্য (Adjacent of Market): ব্যবসার অবস্থান সাধারণত বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে। কারণ ব্যবসা মূলত বাজারকেন্দ্রিক। এজন্য ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে পণ্যের বাজার এলাকাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয় ।

১০. মূলধনের পরিমাণ (Amount of Capital): ব্যবসার উদ্যোক্তা কী পরিমাণ মূলধন সরবরাহ করতে পারবে তার উপর ভিত্তি করে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করতে হয়। অধিক পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করতে পারলে এবং তা যদি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান হয় তবে শহর এলাকায় বিবেচনায় আনতে হয় । অন্যথায় মূলধন স্বল্প হলে এবং তা যদি ক্ষুদ্রায়তন হয় সেক্ষেত্রে সুবিধামতো যে কোনো স্থানে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করা যায়।

১১. ভাড়া অগ্রিম (Rent Advance) : অনেক সময় ব্যবসায়ীকে একসাথে প্রচুর টাকা অগ্রিম দিয়ে একটি নির্ধারিত ভাড়া চুক্তিতে ব্যবসার স্থান নির্বাচন করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীর পক্ষে টাকা সরবরাহ দেওয়ার সামর্থ্য কতটুকু সে বিষয়ে বিবেচনাপূর্বক ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করা হয় ।

১২. সহযোগী ব্যবসার উপস্থিতি (Existance of Subsidiary Business ) : ব্যবসায়ের সফলতা অর্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়। আর এজন্য দেখা যায় শিল্প কারখানার পাশে খুচরা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত কারখানার ব্যবসা গড়ে ওঠে ।

১৩. সম্প্রসারণের সুযোগ (Facility of Expansion) : ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সম্প্রসারণের সুযোগ-সুবিধা কতটুকু তা বিবেচনা করতে হয় । ভবিষ্যতে ব্যবসায়ের উন্নতির সাথে সাথে যেন এর সম্প্রসারণ করা যায় সে দিক লক্ষ রেখে ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন করতে হয় ।

১৪. অন্যান্য বিষয় (Other Factors): ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা, বাজারজাতকরণ সুবিধা, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সুবিধা, ব্যাংক, বিমা কোম্পানি ইত্যাদির নৈকট্য প্রভৃতি সুবিধামতো অবস্থানে নির্বাচন করতে হয় ।

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসার অবস্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কারণ ব্যবসার অবস্থান নির্বাচনের উপর ব্যবসার সফলতা ও ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে । তাই ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনাপূর্বক অবস্থান নির্বাচন করতে হবে ।

Content added || updated By

সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ (Areas of cooperation )

একটি শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে অনেক ধরনের সহায়তার প্রয়োজন । এসব সহায়তা একজন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনা করতে অনুপ্রাণিত করে। শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো শিল্পোদ্যোক্তাকে যে সাহায্য সহযোগিতা করা হয় তাকে সহায়তার উৎস বলে ।

সহায়তার ক্ষেত্রসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা: উদ্দীপনামূলক সহায়তা, সমর্থনমূলক সহায়তা, সংরক্ষণমূলক সহায়তা ।

সহায়তার ক্ষেত্রসমূহ ( Types Areas of cooperation )

যে কোনো দেশের শিল্পায়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা অপরিসীম । কারণ উদ্যোক্তার কার্যকলাপ দেশের শিল্পের উন্নয়নের সহায়ক । শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা ও ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহায়তার প্রয়োজন হয় । প্রকৃতিগত ধরন অনুযায়ী এদেরকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ।

নিম্নে রেখাচিত্রের মাধ্যমে তা দেখানো হলো:

১। উদ্দীপনামূলক সহায়তা (Stimulatory Assistance)

উদ্দীপনামূলক সহায়তা বলতে ঐ সকল কর্মতৎপরতাকে বোঝায় যা একজন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে শিল্প স্থাপনে অনুপ্রেরণা জোগায় । শিল্প বা ব্যবসা স্থাপন করা একটি সৃজনশীল, গঠনমূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ । যে কারণে অনেকেই এ কাজে এগিয়ে আসতে চায় না। অর্থাৎ ঝুঁকি গ্রহণ করতে রাজি হয় না। যদি কোনো ব্যক্তিকে একথাটি ভালোভাবে বোঝানো যায় যে, বেতন বা মজুরিভিত্তিক পেশার চেয়ে অধিক লাভজনক ও সম্মানজনক পেশা হচ্ছে ব্যবসায় । তাহলে সে ব্যক্তি হয়তো ব্যবসায় বা শিল্পোদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত হবে। উদ্দীপনামূলক সহায়তার উপাদানগুলো হলো- (ক) উদ্যোগ গ্রহণমূলক শিক্ষা (খ) অনুপ্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ (গ) বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা (ঘ) শিল্প স্থাপনে সরকারি সাহায্য-সহায়তার ব্যাপক প্রচার (ঙ) প্রকল্প প্রণয়ন ও নির্বাচনে সাহায্য ও পরামর্শ দান (চ) কারিগরি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা প্রদান করা (ছ) প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান দেওয়া (জ) নতুন পণ্য ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা ফোরাম গঠন ইত্যাদি ।

২। সমর্থনমূলক সহায়তা (Supportive Assistance)

শিল্প বা ব্যবসায় স্থাপনে আগ্রহী কোনো ব্যক্তিকে তার আশা আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য সমর্থনমূলক সহায়তা প্রয়োজন হয় । সমর্থনমূলক সহায়তা একজন শিল্পোদ্যোক্তাকে শিল্প স্থাপন, পরিচালনা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং আরও বহুবিধ প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা পেতে সাহায্য করে ।

সমর্থনমূলক সহায়তাসমূহ নিম্নরূপ: 

(ক) ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান নিবন্ধীকরণ বা রেজিস্ট্রিকরণ 

(খ) কাঁচামাল সংগ্রহে সহায়তা 

(গ) স্থায়ী ও চলতি মূলধনের সংস্থান 

(ঘ) শিল্পের অবকাঠামোগত সহায়তা 

(ঙ) মেশিনারি নির্বাচন ও সংগ্রহে সাহায্য 

(চ) কাঁচামাল সংগ্রহে সহায়তা 

(ছ) ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় পরামর্শ দান

(জ) কর অবকাশ ও ভর্তুকি প্ৰদান 

(ঝ) পণ্য বাজারজাতকরণে সাহায্য ইত্যাদি ।

৩ । সংরক্ষণমূলক সহায়তা (Sustaining Assistance)

উদ্যোক্তা কর্তৃক শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরও তাকে উৎপাদান কার্য অব্যাহত গতিতে চালিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা বা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে সকল সহায়তার প্রয়োজন হয় সেগুলোকে সংরক্ষণমূলক সহায়তা বলে ।

সংরক্ষণমূলক সহায়তার প্রকৃতি নিম্নরূপঃ

(ক) শিল্প ও ব্যবসায়ের আধুনিকীকরণ 

(খ) নতুন কলাকৌশল ব্যবহার 

(গ) ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা 

(ঘ) পণ্যসামগ্রীর বাজারজাতকরণে সহায়তা 

(ঙ) শিল্প সম্প্রসারণে পরামর্শ দান 

(চ) উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত অর্থসংস্থান 

(ছ) ঋণের সুযোগ সৃষ্টি 

(জ) পণ্য বিপণনের নতুন নতুন পন্থা সৃষ্টি ইত্যাদি ।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে । সাহায্য-সহযোগিতা ব্যতীত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় ।

Content added || updated By

আর্থিক সহায়তা গ্রহণের উৎসসমূহ

সহায়তার উৎসসমূহ (Source of Assistance)

বাংলাদেশে শিল্পায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। যেগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছে। শিল্পায়নে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) সরকারি সহায়তাকারী উৎস (২) বেসরকারি সহায়তাকারী উৎস। 

নিম্নে ছকের মাধ্যমে সহায়তার উৎসমূহ দেখানো হলো:

Content added || updated By

ব্যবসায় সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান ও তাদের কার্যাবলি

১। সরকারি সহায়তা (Government Assistance): ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প স্থাপনে সরকারিভাবে যে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়ে থাকে তাকে সরকারি সাহায্য-সহায়তা বলে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে সরকারি উৎসসমূহ শিল্পোদ্যোগ সহায়তার মূল উৎস হিসেবে পরিগণিত। কারণ দ্রুত শিল্পায়ন সরকারের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচির একটি অন্যতম ক্ষেত্র । সরকার দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন যেমন- শিল্প ও বিনিয়োগ নীতি, রাজস্ব নীতি, রপ্তানি নীতি, বিভিন্ন অবকাঠামোগত সুবিধাদানের নীতি ইত্যাদি । নিম্নে সরকারি সহায়তার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

(ক) শিল্পনীতি: সরকার দ্রুত শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার জন্য শিল্প ও বিনিয়োগ নীতি ঘোষণার মাধ্যমে শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দিক নির্দেশ করে থাকে। শিল্পায়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সময় সময় শিল্পনীতির সংশোধন ও পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করা হয় । একটি সুষ্ঠু শিল্পনীতি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

(খ) রাজস্ব সুবিধা: ব্যবসায়-বাণিজ্যে সহায়তার জন্য সরকার বিভিন্ন রাজস্ব সুবিধা দিয়ে থাকে । এগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো

(i) কর অবকাশ: উন্নত, স্বল্পোন্নত এবং অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপন করা হলে যথাক্রমে পাঁচ বছর, সাত বছর এবং নয় বছরের কর অবকাশ থাকে । এরূপ অবকাশ উৎপাদন শুরুর মাস থেকে গণনা করা হয় । এছাড়া মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পশুর খামারে দশ বছরের কর অবকাশ দেওয়া হয় ।

(ii) বর্ধিত হারে অবচয় ধার্যের সুযোগ: নতুন মেশিনারি ও প্ল্যান্টের বেলায় প্রথম বছর শতকরা ৮০ ভাগ দ্বিতীয় বছর শতকরা ২০ ভাগ অবচয় ধার্য করার সুযোগ রয়েছে । 

(iii) বিনিয়োগ ভাতাঃ কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের মেশিনারী ও প্ল্যান্টের প্রকৃত মূল্যের শতকরা ২০-২৫ ভাগ বিনিয়োগ ভাতা দেওয়া হয় ।

(গ) শিল্পের অর্থসংস্থান: সরকার দেশীয় উদ্যোক্তাদের শিল্পায়নে আকৃষ্ট করার জন্য প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার পুঁজি সংগ্রহের ব্যবস্থা নিয়েছে। 

(ঘ) শিল্পায়নে সাহায্যকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ: কোনো একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন সাফল্যজনকভাবে পরিচালনার জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের নানাবিধ সাহায্যের প্রয়োজন হয়। শিল্পোদ্যোক্তাদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিল্পোদ্যোক্তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহায়তা প্রদান করে আসছে। নিম্নে শিল্পায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাবলি অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (BSCIC): বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্পকে উন্নত ও সাহায্য করার জন্য ১৯৫৭ সালে সরকারি উদ্যোগে এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন ও বিকাশে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ সংস্থার প্রধান কাজ হলো এ শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগের পূর্বে পরামর্শ দান । এ সংস্থার অন্য কার্যগুলো নিম্নরূপ :

(i) শিল্পসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ 

(ii) উদ্যোক্তা শনাক্তকরণ 

(iii) সাহায্যমূলক সেবা 

(iv) শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন, 

(v) প্রকল্প নির্বাচন, 

(vi) প্রকল্প মূল্যায়ন 

(vii) সম্ভাব্যতা পরীক্ষা 

(viii) ঋণ ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান 

(ix) অবকাঠামোগত উন্নয়ন 

(x) ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা উন্নয়ন 

(xi) পণ্য ডিজাইন 

(xii) কাঁচামাল সরবরাহে সাহায্য 

(xiii) উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর বিপণনে সহায়তা 

(xiv) গবেষণা ও উন্নয়ন 

(xv) পণ্যের বাজার সমীক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রবিশেষে এ সংস্থা বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে সংস্থার সাহায্যসমূহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংস্থা দেশের বিভিন্ন স্থানে শাখা স্থাপন করেছে ।

২। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (BSB ): ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির নির্দেশে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় । এর অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৩২ কোটি টাকা । বাংলাদেশকে দ্রুত শিল্পায়িত করার উদ্দেশ্যে নতুন শিল্প প্রকল্প স্থাপন এবং চালু শিল্প প্রকল্পগুলোর সুষমকরণ, আধুনিকীকরণ, যন্ত্রপাতি পরিবর্তন এবং সম্প্রসারণের জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান ও পরামর্শ দেওয়া শিল্প ব্যাংকের প্রধান কাজ ।

বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক দেশীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে এবং ব্যাংকের সাহায্যপ্রাপ্ত শিল্পসমূহের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য সীমিত পরিমাণে স্বল্পমেয়াদি চলতি মূলধন সরবরাহ করে । এছাড়া সীমিত পরিমাণে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিসমূহের শেয়ার সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে ইকুইটি সমর্থন দান, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর শেয়ার জনসাধারণের কাছে বিক্রয়ের জন্য অবলিখন (Underwriting) এবং এ ধরনের কোম্পানিগুলোর জন্য স্বল্পমেয়াদি সম্পূরক অর্থ জোগানের ব্যবস্থা করে । ব্যাংক বিনিয়োগকারীগণ কর্তৃক অন্যান্য সূত্র থেকে সংগৃহীত ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং প্রকল্প নির্বাচনে, বাস্তবায়নে ও পরিচালনায় বিনিয়োগকারীকে বিনামূল্যে কারিগরি পরামর্শ ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে। 

৩। বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (BSRS) : শিল্পক্ষেত্রে ঋণদানের সুযোগ সৃষ্টি, শিল্প সম্পর্কিত সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার কাজ হচ্ছে ঋণ আদায়ের সামগ্রিক অবস্থা তথা ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে সংস্থার প্রয়োজনীয় সামর্থ্য ও যোগ্যতা বৃদ্ধিকল্পে বিশেষজ্ঞমূলক ভূমিকার উন্নয়ন। সংস্থার নিজস্ব পোর্টফলিওভুক্ত শিল্প প্রকল্পগুলোর সুষমকরণ ও আধুনিকীকরণ, প্রতিস্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান । বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণ, অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করা। শিল্পায়ন, গবেষণা ও শিল্প সম্পর্কিত পরামর্শ দান । 

৪ । ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (ICB): এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান । ১৯৭৬ সালের পহেলো অক্টোবর বিনিয়োগ ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান, বিনিয়োগের সম্প্রসারণ, পুঁজিবাজার উন্নয়নে সাহায্য প্রদান, সঞ্চয়কে অর্থকরী কাজে লাগানো ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে এ কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ।

প্রতিষ্ঠার সময় হতেই আইসিবি সাধারণ সীমিত কোম্পানির বৈশিষ্ট্য অধিকারী প্রকল্পসমূহে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রকল্পের যৌক্তিকতা যাচাই ও বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক নির্ধারণের প্রেক্ষিতে অবলিখন ও ঋণপত্র (Debenture) ঋণের যাচাইয়ে সহায়তা করে আসছে। আইসিবি-এর কার্যাবলি সম্পাদনের সময় বাণিজ্যিক দিক ছাড়াও পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারী ও জনসাধারণের দিক বিবেচনা করে থাকে । বিনিয়োগ ঝুঁকি দূর করার জন্য আইসিবির নেতৃত্বে সাধারণ বিমা কর্পোরেশন, বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের সমন্বয়ে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়েছে ।

৫। বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial Bank) শিল্প ও ব্যবসায়ে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা করার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক যথা- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক দেশব্যাপী শাখা বিস্তারের মাধ্যমে সর্বস্তরের শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে। তাছাড়া ব্যাংকিং সেবাকে আরও ব্যাপকতর করার লক্ষ্যে বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব ব্যাংক শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি পুঁজিও সরবরাহ করছে। একজন শিল্পোদ্যোক্তা মূলধন ছাড়াও ব্যাংক থেকে শিল্প স্থাপন সংক্রান্ত বিনিয়োগ-পূর্ব পরামর্শ, পণ্য নির্বাচন এবং বাজারজাতকরণ প্রভৃতি বিষয়ে পরামর্শ পেতে পারে ।

৬। আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক (CIE): শিল্প স্থাপন ও পরিচালনা করতে একজন উদ্যোক্তাকে মেশিনারী, কাঁচামাল এবং খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করার পূর্বে সরকারি অনুমোদন নিতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক বিদেশ থেকে দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করার লাইসেন্স এবং রপ্তানিকারককে রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে ।

৭। বাংলাদেশ হস্তচালিত তাঁতশিল্প দ্রব্য রপ্তানি কর্পোরেশন (BHPECO): এ কর্পোরেশনের প্রধান লক্ষ্য হস্তচালিত তাঁতশিল্প দ্রব্যসমূহের রপ্তানি বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশের তাঁত ও কুটির শিল্পের পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির জন্য এ কর্পোরেশন আন্তর্জাতিক মেলা ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে থাকে । সংস্থা নিজস্ব উদ্যোগে তাঁত শিল্প দ্রব্য রপ্তানি করে থাকে ।

৮। বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সাহায্য সংস্থা (BITAC): দেশের শিল্পায়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কেন্দ্রের প্রধান কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন ডিজাইন ও যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত করা, যন্ত্রপাতি স্থাপনে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে উপদেশ প্রদান, বিভিন্ন প্রকাশনা, সেমিনার, গ্রুপ আলোচনা, প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান দান ইত্যাদি ।

৯। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR) : এ পরিষদ শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার দিক নির্দেশ, নতুন পণ্য ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন ও পরিষদের বিভিন্ন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের বাস্তব প্রয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে। এছাড়া এটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের গবেষণা সেল স্থাপনে উৎসাহিত করে। দেশীয় প্রযুক্তি বা প্রক্রিয়া উন্নয়ন এবং শিল্প ক্ষেত্রে তার প্রয়োগের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করাও পরিষদের অন্যতম কাজ। একজন শিল্পোদ্যোক্তা এ পরিষদের আবিষ্কৃত পণ্য বা প্রক্রিয়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করে উৎপাদন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে ।

১০। ইন্ডাট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট লিজিং কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি: (আইডিএলসি): দেশের শিল্প ও ব্যবসায়ের উন্নয়নের জন্য লিজিং কোম্পানির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ । আইডিএলসি ইজারা চুক্তির ভিত্তিতে মেশিনারি ও অফিস ইকুইপমেন্ট প্রভৃতি সরবরাহের মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করছে ।

১১। শিল্প ও বণিক সমিতি: শিল্প, ব্যবসায়, বাণিজ্যের উন্নয়নে ও প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যবসায় শিল্প ও বণিক সমিতির ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন সমিতি তাদের ব্যবসায় সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করে । ব্যবসায় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার স্থাপন, সদস্যদের স্বার্থ সংরক্ষণ প্রভৃতি এ সমিতির কাজ। এসব সমিতির মধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বারস অব কমার্স (এমসিসি), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ (নাসিব) প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । 

১২। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব): এ দুটি ব্যাংক কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রদান ছাড়াও কৃষিভিত্তিক ও কুটির শিল্পসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে । সারা দেশে এদের অনেক শাখা রয়েছে । 

১৩। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি): বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইপিবি শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে। এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি পণ্যের প্রচার, বিদেশি আমদানিকারকের সাথে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকের যোগাযোগ স্থাপন, রপ্তানি লাইসেন্স প্রদান, অল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা, রপ্তানিকারকের বিদেশ সফরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা প্রদান এবং এক্সপোর্ট গ্যারান্টি প্রদান । 

১৪ । ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি): এ করপোরেশন শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল সংগ্রহ ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে সাহায্য করে । এছাড়া কাঁচামালের নতুন উৎসের সন্ধান ও উৎপাদিত পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ।

১৫। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (BSTI): এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের দ্রব্য উৎপাদনে সহায়তা করা যাতে দেশি ও বিদেশি বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে । বাংলাদেশের উৎপাদিত দ্রব্য দেশি ও বিদেশি বাজারে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য অর্জনের জন্য উৎপাদিত দ্রব্যের মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য এ সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে । 

১৬। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ও রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন বোর্ড (আরইবি): 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ।

১৭। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম): শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যবস্থাপক সরবরাহের জন্য এ সংস্থা প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে । এসব কোর্সে শিল্পোদ্যোক্তা নিজে বা তার ফার্মের ব্যবস্থাপকগণ অংশগ্রহণ করে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে ।

অধিকন্তু শিল্প ও বাণিজ্য খাতের দক্ষ ব্যবস্থাপক ও কারিগরি জ্ঞানে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সরবরাহ করার লক্ষ্যে দেশের শিল্প ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, কমার্শিয়াল ইন্সটিটিউট সরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২। বেসরকারি সহায়তা (Non Government Assistance): কোনো শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উৎসাহ বা সহায়তা বেসরকারি উৎস থেকেও পাওয়া যায় । বর্তমান শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার চেয়ে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (এনজিও) উপদেষ্টা ফার্ম, ব্যবসায় বা বণিক সমিতি থেকে শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা নিতে পারে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থসংস্থানের ক্ষেত্রে বেসরকারি উৎস উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। বেসরকারি সহায়তার উৎসকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা-

(ক) বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ: ব্যবসায়ের অর্থসংস্থানের একটি স্বীকৃত উপায় বা উৎস হিসেবে আমাদের সমাজে পূর্বকাল থেকেই বিবেচিত হয়ে আসছে, আত্মীয়স্বজনও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করা। 

(খ) বেসরকারি সাহায্য সংস্থা: বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সাহায্য সংস্থাগুলো উদ্যোক্তা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । যেমন-গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা প্রভৃতি সংস্থা আমাদের দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ও কুটির শিল্প স্থাপনে অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে থাকে । এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংস্থার কার্যক্রম বর্ণনা করা হলো :

১। গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank) 

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক নামকরণের মাধ্যমে একটি গবেষণা কাজ হাতে নেন । পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তা বিরাট মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পকে বিত্তহীনদের জন্য একটি বিশেষ ব্যাংকে রূপান্তরিত করা হয়। সাধারণত বিত্তহীনদের ৫ বা ১০ জনের একটি দলকে একত্র করে এ ব্যাংক কোনো বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ঋণ দিয়ে থাকে । তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেবল একজনকে পৃথকভাবে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে । মাথাপিছু গড় ঋণ ২ থেকে ৩ হাজারের বেশি হয় না । ঋণের টাকা সদস্যগণ সম্মিলিতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে লাভজনক ব্যবসায় বা ক্ষুদ্র শিল্পে খাটাতে পারে । গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদান ছাড়াও গ্রুপের সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানেও উদ্বুদ্ধ করে ।

২। ব্র্যাক (Bangladesh Rural Advancement Committee) 

ব্র্যাক সর্ববৃহৎ বেসরকারি সাহায্য সংস্থা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম হাতে নিয়ে সংস্থাটি স্থাপিত হয় । কিন্তু এরপর থেকে দারিদ্র দূরীকরণ ও দরিদ্র জনগণকে ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এ সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ।

উদ্যোক্তা উন্নয়নের লক্ষে ব্র্যাক যে কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে-

 ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন কার্যক্রম: এর মধ্যে রয়েছে কাপড় বুনন, হাঁস-মুরগি পালন, আসবাবপত্র, তৈল উৎপাদন, গুড়, দড়ি, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি, ধান ভানা প্রভৃতি ।

সহযোগী প্রতিষ্ঠান উন্নয়নঃ এ কর্মসূচির আওতায় ভূমিহীন লোকদের প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনা, বিপণন প্রভৃতি কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠিত করা হয় । যথা— ইট তৈরি প্রকল্প ।

উৎপাদন কেন্দ্র উন্নয়ন: আধুনিক ডিজাইন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ শিল্পজাত সামগ্রীর মান উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয় । ঐতিহ্যগত কারুশিল্পের উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে সিল্ক, জামদানি, নকশিকাঁথা প্রভৃতি ।

৩। বেসরকারি ব্যাংকসমূহ: দেশি-বিদেশি ব্যাংক মিলে বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে অনেক ব্যাংক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক লি., ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লি., আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক, গ্রীভলেজ ব্যাংক, ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. এ বি ব্যাংক লি., ঢাকা ব্যাংক লি., সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লি. প্রভৃতি । শিল্প, ব্যবসায় ও বাণিজ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান এসব ব্যাংকের অন্যতম কাজ। এসব ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যও সম্পাদন করে ।

৪ । বিমা কোম্পানি: সাধারণ বিমা করপোরেশন ও জীবন বিমা করপোরেশন দুটি সরকারি বিমা কোম্পানির পাশাপাশি বেসরকরি খাতে বেশ কয়েকটি বিমা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এদের মধ্যে ইস্টার্ন ইনসিউরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইনসিউরেন্স, গ্রীনল্যান্ড ইনসিউরেন্স ও প্রগতি ইনসিউরেন্স প্রধান । এছাড়াও কিছু সংখ্যক বিদেশি ইনসিউরেন্স কোম্পানিও বাংলাদেশে বিমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত রয়েছে ।

Content added By

ব্যবসা পরিচালনায় বিদ্যমান আইন সম্পর্কে ধারণা

ব্যবসায় আইনগত দিক (Legal Aspects of Business )

মানুষের জীবিকা অর্জনের জন্য যেসব বৈধ পেশা রয়েছে তার মধ্যে ব্যবসা অন্যতম । যে কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই চাকরির পরিবর্তে জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে ব্যবসা করতে পারে। এতে আইনের কোনো বাধা নিষেধ নেই। তবে প্রতিটি দেশের সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের স্বার্থ রক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ণ করে থাকে । কাজেই ব্যবসা স্থাপন ও পরিচালনাসংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে ব্যবসায় উদ্যোক্তার জ্ঞান থাকা ব্যবসায় সাফল্যের পূর্বশর্ত। বিভিন্ন ধরনের আইন দ্বারা ব্যবসার কার্যাবলি প্রভাবিত হয় । যেমন- শ্রম ও শিল্প আইন, কারখানা আইন, ব্যবসায় সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণমূলক আইন, নিম্নতম মজুরি আইন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ আইন, শিল্প বিরোধ আইন, শ্রমিক সংঘ আইন, দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন, মূল্য সংযোজন কর আইন ইত্যাদি ।

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. ধরণ অনুযায়ী ব্যবসায়কে কত ভাগে ভাগ করা যায় ? 

২. সেবামূলক ব্যবসায় কাকে বলে । 

৩. একমালিকানা ব্যবসায়ের নিবন্ধন কী বাধ্যতামূলক? 

৪. অংশীদারি কারবারের ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহের প্রয়োজন আছে কি? 

৫. যৌথ মূলধনি কারবারের নিবন্ধন কি বাধ্যতামূলক । 

৬. প্রকৃতিগত ধরন অনুযায়ী সহায়তার ধরনকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । 

৭. সমর্থনমূলক সহায়তা কী? 

৮. একজন ব্যবসায়ীর সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয় কেন? 

৯. সাহায্য-সহযোগিতার উৎস কত প্রকার ও কী কী? 

১০. বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার প্রধান কাজ কী? 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. ব্যবসায়ের সংজ্ঞা দাও । 

২. ব্যবসায়ের ধরন কত প্রকার ও কী কী? 

৩. উৎপাদনমূলক ব্যবসা কাকে বলে ? 

৪. ক্রয়-বিক্রয় জাতীয় ব্যবসা বলতে কী বোঝায় ? 

৫. অংশীদারি ব্যবসার সংজ্ঞা দাও । 

৬. সমবায় সমিতি কাকে বলে? 

৭. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সংজ্ঞা দাও । 

৮. যৌথ মূলধনি ব্যবসার সংজ্ঞা দাও । 

৯. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি কাকে বলে? 

১০. রাষ্ট্রীয় কারবার কাকে বলে? 

১১. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান নির্ধারণ বলতে কী বোঝায় ? 

১২. সহায়তার উৎসসমূহ বলতে কী বোঝায় ? 

১৩. উদ্দীপনামূলক সহায়তা কাকে বলে? 

১৪. সমর্থনমূলক সহায়তা কাকে বলে ? 

১৫. সংরক্ষণমূলক সাহায্য সহায়তা কাকে বলে? 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পদ্ধতি সম্পর্কে লেখ।

Content added By
Promotion